আমার পরিবারের কায়িকশ্রম ও মেধাশ্রমের একটি তালিকা প্রস্তুত
৬ষ্ঠ শ্রেণির কোমলমতী শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আশা করছি তোমরা খুব ভালো আছো। আজ তোমাদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। এই আর্টিকেলে তোমাদের জন্য রয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির ১৫তম সপ্তাহের কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বিষয়ের ৩য় অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর/ সমাধান : আমার পরিবারের কায়িকশ্রম ও মেধাশ্রমের একটি তালিকা প্রস্তুত।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ১৫তম সপ্তাহের কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা অ্যাসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্ট:
তােমার পরিবারের কায়িকশ্রম ও মেধাশ্রমের একটি তালিকা প্রস্তুত কর। এর মধ্যে কোন ধরণের শ্রমকে তুমি অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করাে? কেন?
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):
১. কায়িক শ্রম ও মেধাশ্রমের ধারণা দিবে।
২. তার পরিবারের কায়িকশ্রম ও মেধাশ্রমের কাজগুলাে ভাগ করে সাজাবে।
৩. তার পরিবারের কোন ধরণের কাজকে সে অধিক গুরুত্বপুর্ণ বলে মনে করে? তা যুক্তিসহ লিখবে।
এ বিষয়ে পাঠ্যপুস্তক ও প্রয়ােজনে অভিভাবকদের সহযােগিতা নিবে।
কায়িক শ্রম ও মেধা শ্রমের ধারণা
Man is the architect of his fortune” অর্থাৎ “মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্ত্রক”। এ কর্মমুখর জীবনে মানুষকে নিরন্তর কোনো না কোনো প্রতিকূল পরিবেশে বসবাস করতে হয়। “Life is not a bed of roses” জীবন পুষ্প-শয্যা নয়। মানুষকে এ প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে হলে একমাত্র শ্রমের সাহায্যেই টিকে থাকতে হবে। তাই বলা যেতে পারে মানবজীবন মাত্রই শ্রমের কর্মশালা আর পৃথিবী হলো কর্মক্ষেত্র।
মানবজীবনের এক অলৌকিক বিষয় হলো শ্রম | এ শ্রমের শক্তিতেই মানুষ যুগযুগ ধরে গড়ে তুলেছে মানবসভ্যতা। আদিম যুগে পাথরের নুড়ি দিয়ে শ্রমের সাহায্যে মানুষ তৈরি করেছিল প্রথম হাতিয়ার। তারপর সুদীর্ঘকাল ধরে মানুষ তিল তিল শ্রমে গড়ে তুলেছে সভ্যতার বিরাট সৌধ।
শ্রমের কল্যাণেই মানুষ পশুজগৎ থেকে নিজেকে করেছে পৃথক। মানুষ যে আধুনিক যন্ত্র চালায়, সুন্ঘ ছবি আঁকে, কিংবা অপরূপ সুরের ঝংকার তোলে তার মুলে রয়েছে শ্রমের অবদান। বিশ্বসভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে শ্রম মানুষের তরন্ত শ্রম। সভ্যতার বিকাশে কায়িক ও মেধা শ্রমের উভয়ই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আমার পরিবারের কায়িকশ্রম ও মেধাশ্রমের একটি তালিকা প্রস্তুত
দৈহিক বা কায়িক শ্রম বলতে বুঝায় যে কাজ শারীরিক শক্তির মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ আমাদের হাত পা দিয়েছেন শারীরিক শ্রমের জন্যে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায়, সেই আদিকাল থেকে মানুষ কায়িক শ্রম করে তাদের সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছেন। আমাদের চারপাশে তাকালে দেখা মেলে কায়িক শ্রমের নানা ধরণ। যেমনঃ মজুর-চাষি-কুলি ইত্যাদি। মানসিক শ্রম বলতে বুঝায় নিজের মস্তিস্ক খাটিয়ে বা চিন্তা-চেতনা দিয়ে যে কাজ করা হয়। বর্তমান যে আধুনিক সভ্যতার উৎকর্ষ দেখা যায় তার মূল সূত্রপাত হলো এই মানসিক শ্রম। প্রকৃতপক্ষে মানসিক শ্রমে দৈহিক শক্তির দরকার না পড়লেও তা সম্পাদনে দৈহিক শ্রমের প্রয়োজন পরে। কাজেই কায়িক শ্রমের মূল শক্তি হল মেধা বা মানসিক শ্রম।
কোন কাজ সম্পাদনের পূর্বে প্রয়োজন সে কাজটি সম্পর্কে জানা এবং তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছক তৈরি করা। আর পরিকল্পিত ছকের জন্য প্রয়োজন মেধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো । আজকের বর্তমান সভ্যতার বিকাশ একদিনে হয়নি। যুগের পর মুগ মানুষে তীর মেধা শক্তি ও কায়িক শ্রম দিয়ে সভ্যতার বিকাশ সাধন করেছে।
আগেরকালে মানুষ আগুন ভ্যালাতে পাথরে পাথরে ঘষা দিত কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষ তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে আগুল জ্বালানোর জন্য বিকল্প পন্থা আবিষ্কার করেছে। প্রাচীন যুগের মানুষেরা গুহায় বাস করত কারণ তারা ঘড় বানানো জানতো না। কিন্তু এখন তৈরি হচ্ছে বড় বড় অট্টরালিকা। এইসবই সম্ভব হয়েছে মানুষের মেধা ও কায়িক শ্রমের মাধ্যমে। শিল্প, বিজ্ঞান, শিক্ষা- সাহিত্য, অথনৈতিক, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিটি ক্ষেতে উৎকর্ষ সাধনরে মুল শক্তি হিসেবে কাজ করেছে মেধা ও কায়িক শ্রম।
কায়িক শ্রমের তালিকাঃ
- রিকশা চালানো
- গাড়ি চালানো
- কৃষি কাজ করা
- মাছ ধরা
- হাঁড়ি-পাতিল বানানো
- কাপড় তৈরি করা
- দোকান করা ইত্যাদি।
মেধা শ্রমের তালিকাঃ
- চিকিৎসা করা
- লেখাপড়া করা
- শিক্ষাদান করা
- প্রকৌশলীর কাজ
- ব্যাংকিং
- প্রশাসনিক কাজ-কর্ম ইত্যাদি।
আমাদের পরিবারে যে যে শ্রম রয়েছে তার তালিকাঃ
- বাবা – চিকিৎসা করা (মেধা শ্রম)
- মা – শিক্ষাদান করা (মেধা শ্রম)
- জেঠা – গাড়ি চালানো (কায়িক শ্রম)
- মেঝো কাকা – কৃষি কাজ করা (কায়িক শ্রম)
- ছোট কাকা – কাপড় তৈরি করা (কায়িক শ্রম)
আমি উভয় শ্রমকে সমান গুরত্বপূর্ণ মনে করি। কোন শ্রমকে বেশি গুরত্ব দেই না। নিচে এর কারণ দেওয়া হলোঃ
কায়িক শ্রমের ভূমিকা-
মানুষ তার শারীরিক শক্তি দিয়ে কোন কাজে যে শ্রম দেয়, তাই শারীরিক বা কায়িক শ্রম। সৃষ্টিকর্তা আমাদের শারীরিক কাজকর্ম করার জন্য বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন এসব ব্যবহার করে যে শ্রম দেয়া হয়, তাই শারীরিক বা কায়িক শ্রম। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য শারীরিক বা কায়িক শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। কায়িক শ্রমের মাধ্যমে সভ্যতাকে গড়ে তুলেছেন কামার-কুমার, তাঁতি, জেলেসহ আরো অনেকে। এরা নিজ নিজ কাজ করেন বলেই আমরা আরামদায়ক জীবন-যাপন করতে পারি। কৃষক যদি কষ্ট করে ফসল না ফলাতেন তাহলে সবাই কি খেয়ে বেঁচে থাকত? যদি দর্জিরা পোশাক তৈরি না করতো তবে সবাই কি পরিধান করতো? তাই বলা যায় বর্তমান সভ্যতার মূলে কায়িক শ্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মেধাশ্রমের ভূমিকা-
চিন্তা, ভাবনা, জ্ঞান, মনন ইত্যাদি ব্যবহার করে যখন কোন কাজ করা হয়, তাকে মেধাশ্রম বলে। যেমন- এরকম একটি কাজ হল ইতিহাস লেখা। ইতিহাস হল মানব সমাজের ঘটে যাওয়া ঘটনার সারসংক্ষেপ। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন দিক সারসংক্ষেপ। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ইতিহাস লেখা হয় ; যা সহজ নয়। অনেক মেধা খাটিয়ে তা লিখতে হয়। আবার টিভিতে যখন সংবাদ দেখি, যে সংবাদকর্মী এই সংবাদটি তৈরি করে তাকে সারাদিন থাকতে হয় ফিল্ডে। অনেক কষ্ট করতে হয়। তারপর সংবাদ প্রস্তুত করতে হয়। প্রস্তুতি শেষে স্ক্রিনে যেতে হয়।
স্ক্রিনের সংবাদে সারাদিনের পরিশ্রমই মেধাশ্রমের উদাহরণ। এছাড়াও গল্প, কবিতা লেখা, ছবি আঁকা, বিদ্যুৎ, পাখা আবিষ্কার এসব মেধাশ্রমের মাধ্যমেই অর্জিত। এসব শ্রম-ঘাম ঝড়াচ্ছেনা ঠিকই ; তবুও করছে ক্লান্ত-শ্রান্ত। আমাদের মস্তিষ্ক খেটেই চলছে অবিরাম। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলেই আমরা বুঝতে পারবো যে, সভ্যতার বিকাশে কায়িক ও মেধাশ্রম উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় যখন আমাদের একটু আরামের প্রয়োজন হয়, তখন আমরা পাখা বা এসি খুঁজি। এক্ষেত্রে পাখা কিংবা এসির আবিষ্কার সম্ভবপর হয়েছে কায়িক এবং মেধা উভয় শ্রমেরই বদৌলতে। একইভাবে, সভ্যতার অগ্রগতিতে প্রত্যেকটি আবিষ্কারের মূলে কায়িক এবং মেধাশ্রম দুটোরই গুরুত্ব অপরিসীম।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, সভ্যতার বিকাশে কায়িক এবং মেধাশ্রম উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। একটি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠের মতো বিবেচনা করলে কোন শ্রমকে বেশি গুরত্বপূর্ণ মনে করা যাবে না। আমার কাছে উভয় শ্রম সমান। বিশ্লেষণ করা হল।
এই ছিল তোমাদের ষষ্ঠ শ্রেণির ১৫তম সপ্তাহের কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বিষয়ের ৩য় অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর/ সমাধান : আমার পরিবারের কায়িকশ্রম ও মেধাশ্রমের একটি তালিকা প্রস্তুত।
আরো দেখুন-
সকল স্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বিজ্ঞপ্তি, চাকুরির পরীক্ষা, এডমিট কার্ড, পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বেসরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন। ইউটিউবে সর্বশেষ আপডেট পেতে বাংলা নোটিশ ডট কম এর ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিজ্ঞপ্তি, খবর, নোটিশ ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।